সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ জহির উদ্দিন স্বপন
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতিঃ এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু
প্রধান সম্পাদকঃ লায়ন এস দিদার সরদার
সম্পাদকঃ কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদকঃ মাসুদ রানা পলাশ
সহকারী সম্পাদকঃ লায়ন এসএম জুলফিকার
সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: মাহমুদা মিতু দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর
লাদাখ ও গালওয়ান বৃত্তান্ত

লাদাখ ও গালওয়ান বৃত্তান্ত

ভারত ও চীন- এ দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সংঘাতের ফলে বিশ্বজুড়ে এখন আলোচিত দুটি স্থানের নাম ‘লাদাখ’ আর ‘গালওয়ান উপত্যকা’। জেনে নেওয়া যাক এ দুটি নামের এলাকার ইতিহাস। জানাচ্ছেন শামস বিশ্বাস-

যেভাবে হলো গালওয়ান উপত্যকার নাম

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উঁচু গলওয়ান এলাকাটি লাদাখের একেবারে মাঝ বরাবর। লাদাখ ভারতের কাছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও এর বড় এক অংশই বহু আগে থেকে চীনের দখলে। ‘আকসাই-চিন’ নামে তা পরিচিত। প্রায় ১৪ হাজার বর্গমাইল হবে এলাকাটি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে কোনো ভৌগোলিক নিদর্শন। তা ওই পর্বতশৃঙ্গই হোক বা উপত্যকা, গিরিখাত-নেটিভ বা দেশি অভিযাত্রীদের নামে নাম রাখার ঘটনা ছিল খুবই বিরল। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বাঙালি গণিতবিদ রাধানাথ শিকদার হিমালয় পর্বতমালার ১৫ নম্বর শৃঙ্গের (চূড়া-১৫) উচ্চতা নিরূপণ করেন এবং প্রথম আবিষ্কার করেন, এটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। কিন্তু জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে পর্বতের নামকরণ করা হয় মাউন্ট এভারেস্ট। ব্রিটিশ সাহেবদের নামে নামকরণ করাটাই তখন ছিল তখনকার রেওয়াজ। এর ব্যতিক্রম গালওয়ান উপত্যকা! লাদাখের বিখ্যাত মুসলিম অভিযাত্রী গুলাম রসুল গালওয়ানের কপালে জুটে যায় বিরল এই সম্মাননা।

লাদাখের ধূসর পাহাড় আর তুষারধবল শিখর দিয়ে ঘেরা রুক্ষ ও প্রশস্ত, পাথুরে এক ল্যান্ডস্কেপের মধ্যে দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে যে নাদী, এর নামও ‘গালওয়ান নদী’। এই নদীর উৎস কারাকোরামের গিরিকন্দরে। আকসাই-চিন ও পূর্ব লাদাখের মধ্য দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে এই প্রবাহ গিয়ে মিশেছে শিয়ক নদীতে। তা আবার সিন্ধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী।

কাশ্মীরি ভাষায় ‘গালওয়ান’ শব্দের অর্থ হলো ডাকাত। গুলাম রসুল গালওয়ানের পিতামহ কারা গালওয়ান ছিলেন। উনিশ শতকের কাশ্মীরে বিখ্যাত এক দস্যু ধনীর সম্পদ লুটে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের ‘রবিনহুড’। জনশ্রুতি আছে, কাশ্মীরের মহারাজার শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে তার গলাতেও কারা গালওয়ান ছুরি ধরেছিলেন। কিন্তু পরে রাজার সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েই কারার ফাঁসি হয়। আর তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে চলে আসেন লাদাখে। কিন্তু ততদিনে তাদের নামের শেষে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে গেছে ‘গালওয়ান’ বা ‘ডাকাত’ শব্দটি।

গুলাম রসুল গালওয়ানের জন্ম লাদাখের রাজধানী লেহতে আনুমানিক ১৮৭৮ সালে। বিধবা মা তাকে বড় করে তুলছিলেন। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে টিকে থাকতে কিশোর বয়সে ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের সঙ্গে নানা অভিযানে অংশ নিতে থাকেন। পশ্চিমা অভিযাত্রীরা তখন ঘন ঘন তিব্বত, ইয়ারকান্ড (যা এখন চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর স্বশাসিত অঞ্চল), কারাকোরাম, পামির মালভূমি বা মধ্য এশিয়ার দিকে অভিযান পরিচালনা করছেন। কিশোর গুলাম রসুলও জুটে যান তাদের সঙ্গে। মাত্র ১২ বছর বয়সে স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের দলে পোর্টার বা মালবাহক হিসেবে যোগ দেন।

১৮৯২ সালে চার্লস মারের (সেভেন্থ আর্ল অব ডানমোর) সঙ্গে পামির ও কাশগার পর্বত অভিমুখে এক অভিযানে বেরিয়ে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ওই দলটি লাদাখের এক দুর্গম অঞ্চলে উঁচু উঁচু পর্বতমালা আর খাড়া গিরিখাতের এক মাঝখানে পড়ে থমকে গিয়েছিল। সেখান থেকে বেরোনোর কোনো রাস্তা দেখা যাচ্ছিল না। গুলাম রসুল গালওয়ান তখন নিজেই বেরিয়ে পড়েন ওই জটিল গোলকধাঁধার মধ্যে থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে। তার পর খাদের ভেতর দিয়ে তিনি একটা বেশ সহজ রাস্তা ঠিক খুঁজেও বের করে ফেলেন। ফলে ওই অভিযান শেষ পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সম্পন্ন হতে পেরেছিল।

অভিযাত্রী দলের নেতা চার্লস মারে কিশোর গুলাম রসুলের প্রতিভায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি কলকল করে বয়ে যাওয়া যে জলধারাটির পাশ ঘেঁষে নতুন রাস্তাটির সন্ধান মেলে, এর নামকরণই করে ফেলেন ‘গালওয়ান নালা’। সেই থেকেই গুলাম রসুল গালওয়ান লাদাখের শুধু ইতিহাস নয়, ভূগোলেরও অংশ হয়ে যান। পরে সামান্য মালবাহক ও টাট্টু ঘোড়ার চালক থেকে গুলাম রসুল গালওয়ান লেহতে নিযুক্ত ব্রিটিশ জয়েন্ট কমিশনারের ‘আকসকল’ বা প্রধান সহকারীর পদেও উন্নীত হয়েছিলেন। আর অভিযানে বেরিয়ে পড়াটা ছিল তার নেশা। অর্থকষ্ট মিটে যাওয়ার পরও ৪৭ বছরেরর জীবনে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যে কত অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা পথপ্রদর্শন করেছেন, এর হিসাব নেই।

বর্তমানে লাদাখ

বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও এককালের শান্ত এলাকা লাদাখে চলছে আজ চরম দুর্দশা। খ–বিখ-িত করে এর ওপর অধিকার নিয়ে লড়ছে তিন পরাক্রমশীল দেশ ভারত, পকিস্তান ও চীন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরও যে লাদাখ একত্র ছিল, সেটি এখন তিন খ- হয়ে গেছে। লাদাখের আকসাই-চিন রয়েছে চীনের হাতে। ১৯৬২ সাল থেকে লাদাখের সাকসগ্রাম ভ্যালি (প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার) পাকিস্তান চীনকে ব্যবহার করতে দিয়ে রেখেছে। তা বর্তমানে চীন নিজের ভূখ-ই মনে করে। লেহ ও কারগিল জেলা নিয়ে গঠিত বাকি অংশ রয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া রয়েছে ‘সিয়াচেন হিমবাহ’ এলাকা। সেটি নিয়েও ভারত-পাকিস্তান বিবাদে লিপ্ত। জম্মু ও কাশ্মীরের দুই খ- ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। দুই অংশেই কেন্ত্রীয় শাসনের নামে চলে সেনা নিয়ন্ত্রণে। লাদাখ পাশে থাকা প্রিন্সিপালি স্টেট গিলগিট-বালতিস্তান আবার ১৯৪৭ থেকে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) ওই অঞ্চল দিয়েও যাচ্ছে। লাদাখসহ জম্মু, কাশ্মীর, বালতিস্তানÑ কোনো এলাকাই নেই স্থানীয়দের নিজ শাসনে।

লাদাখের জম্মু-কাশ্মীরভুক্তি

লাদাখ মানেই দখল-বেদখলের ইতিহাস। ১৮৩৪ সালে ডোগরা আক্রমণের আগে পর্যন্ত লাদাখ ছিল স্বাধীন হিমালয় রাষ্ট্র। যেমনটা ছিল ভুটান ও সিকিম। ঐতিহাসিক এ সাংস্কৃতিকভাবে এই রাজ্য তিব্বতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ছিল। লাদাখ ও তিব্বত ভাষাগত এবং ধর্মীয়ভাবে যুক্ত তো ছিলই, রাজনৈতিকভাবেও তাদের ছিল একই ইতিহাস।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নব্য প্রস্তর যুগেও এই অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল। এই অঞ্চলের প্রথম দিককার অধিবাসীদের মধ্যে মিশ্র ইন্দো-আর্য মোন ও দর্দ জাতির মানুষ ছিল। হিরোডোটাস গান্দারিওই ও জারেক্সেসের গ্রিস আক্রমণের উল্লেখ করার সময় দাদিকাই নামে এক জাতির উল্লেখ করেন। মেগাস্থিনিস ও নিয়ার্কোস এবং প্রথম শতাব্দীতে প্লিনি স্বর্ণ প্রস্তুতকারক দর্দ জাতির উল্লেখ করেছেন। টলেমি সিন্ধু নদ উপত্যকার ওপরের অংশে দারাদাই নামক জাতির উল্লেখ করেন। খালাতসের কাছে প্রাপ্ত উভিমা কভথিসার খরোষ্ঠিলিপি থেকে জানা গেছে, প্রথম শতাব্দীতে লাদাখ কুষাণ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।

৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাং চুলুডুয়ো বা কুলু থেকে লুয়োহুলুয়ো বা লাহুল পর্যন্ত এক যাত্রার উল্লেখ করে বলেন, চুলুডুয়ো থেকে এক হাজার ৮০০ বা ৯০০ লি উত্তরে পর্বত ও উপত্যকার কঠিন পথ ধরে গেলে লুয়োহুলুয়ো দেশে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে আরও দুই হাজার লি উত্তরে কঠিন বাধার মধ্যে দিয়ে শীতল ঝড় ও তুষারপাতের মধ্য দিয়ে গেলে মারসা দেশে যাওয়া যায়। এই মারসা বা মোলোসো লাদাখের অপর নাম মার?ুলের সঙ্গে সমার্থক। এই ভ্রমণ রচনা থেকে জানা গেছে, এই মোলোসো সুবর্ণ গোত্র রাজ্যের পার্শ্ববর্তী রাজ্য। গুসেপ তুচ্চির মতে সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয়দের কাছে ঝাংঝুং বা তার দক্ষিণ অংশ সুবর্ণ গোত্র বা সুবর্ণভূমি বা স্ত্রীরাজ্য নামে পরিচিত ছিল।

ঐতিহাসিক জন ব্রে তার গবেষণাপত্র খধফধশযর যরংঃড়ৎু ধহফ ওহফরধহ হধঃরড়হযড়ড়ফ-এ লিখেছেন, ‘লাদাখ ছিল তিব্বত সাম্রাজ্যের অংশ- যা ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে রাজা লাংদর্মার মৃত্যুর পর ভেঙে যায়। এর পর এ রাজ্য হয়ে ওঠে স্বাধীন। তবে ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে এর সীমানাও পাল্টেছে এবং বিভিন্ন সময়ে তা বর্তমান পশ্চিম তিব্বতের অংশ হয়েছে। আর্থিকভাবে এই এলাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মধ্য এশিয়া ও কাশ্মীরের মাঝে এটিই ছিল গুদামস্থল।’ ব্রে লিখছেন, ‘তিব্বতের পশম শাল উল লাদাখ হয়ে কাশ্মীর যেত। একই সঙ্গে কারাকোরাম পাস হয়ে ইয়ারকন্ড ও কাশনগরের মধ্য দিয়ে চীনা তুর্কিস্তান পর্যন্ত পথ বাণিজ্যের রাস্তা হিসেবে বেড়ে উঠেছিল।’

১৮১৯ সালে শিখরা কাশ্মীরের দখল নেওয়ার পর রাজা রণজিৎ সিং লাদাখের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু জম্মুর শিখদের ডোগরা জায়গিরদার গুলাব সিং লাদাখকে জম্মু কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

ব্রিটেনের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন ভারতে নিজেদের পা শক্ত করে ফেললেও লাদাখে প্রথম দিকে তাদের আগ্রহ ছিল না। তবে এলাকায় ডোগরা আক্রমণ নিয়ে তাদের উৎসাহ ছিল। তাদের আশা ছিল, এর ফলে তিব্বতের ব্যবসার বড় অংশ তাদের হাতে আসবে।

১৮৩৪ সালে গুলাব সিং তার সবচেয়ে সমর্থ সেনাপতি জারওয়ার সিং কালুরিয়াকে ৪০০০ সেনার সঙ্গে ওই এলাকা দখল করতে পাঠান।

প্রথমে লাদাখিরা হতচকিত হয়ে যাওয়ায় কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি। কিন্তু ১৮৩৪ সালের ১৬ অগাস্ট ডোগরারা হারিয়ে দেয় ৫০০০ সেনাদলকে। এর নেতৃত্বে ছিলেন ভুটিয়া নেতা মঙ্গল। এর পর লাদাখ চলে আসে ডোগরাদের অধীন। ১৮৪১ সালের মে মাসে চিনের কুইং সাম্রাজ্যের অধীন তিব্বত লাদাখ আক্রমণ করে। তাদের আকাক্সক্ষা ছিল এই এলাকাকে চীনের সাম্রাজ্যে নিয়ে আসা। এর জেরে শুরু হয় চীন-শিখ যুদ্ধ। চীন-তিব্বত সেনা পরাজিত হয় এবং চুসুল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়Ñ যাতে বলা ছিল কোনো দেশই অন্যের সীমানায় পা দেবে না।

১৮৪৫-৪৬ সালে প্রথম ইংরেজ-শিখ যুদ্ধের পর লাদাখসহ জম্মু-কাশ্মীর ইংরেজদের হাতে চলে যায়। জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশদের। তারা রাশিয়ানদের সঙ্গে মোলাকাতের জন্য একটা বাফার জোন বানাতে চাইছিল। একই সঙ্গে তারা লাদাখের আলাদা অস্তিত্বও রাখতে চায়নি। কিন্তু এই এলাকা তিব্বত ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে থাকায় সে পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি।

একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, সে সময়ে মানুষের কাছে দেশের ধারণা স্পষ্ট ছিল না। ফলে জম্মু-কাশ্মীরকে মানচিত্রে দেখানোর সময় ব্রিটিশরা একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে থাকতে পারে।

মানচিত্র নিয়ে ব্রিটিশদের ধারাই বহন করে গিয়েছে ভারত। ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ তার বই ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী’তে বলেছেন, ‘ভারতীয়রা প্রায় সব ক্ষেত্রেই দাবি করে এসেছে, এটাই সীমানা। তাদের পক্ষে ছিল চুক্তি এবং ঐতিহ্য। অন্যদিকে চীনারা দাবি করেছে, এ এলাকা কখনই নির্ধারিত হয়নি। দুই সরকারের তরফেই এ দাবির পেছনে ছিল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার। ভারতের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, চীনের ক্ষেত্রে তিব্বতের ওপর চৈনিক সাম্রাজ্যবাদ।’

১৯৫০ সালে চীন তিব্বত দখল করার পর তাদের লাদাখ নিয়ে নতুন করে আগ্রহ জন্মায়, বিশেষ করে দলাই লামা পালিয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পর লাসায় ১৯৫৯ সালে যে তিব্বতি বিদ্রোহ হয়েছিল, এর পর।

ইতিহাসের পাতায় লাদাখ

লাদাখ উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণি ও দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই এলাকার অধিবাসীরা ইন্দো-আর্য ও তিব্বতি বংশোদ্ভূত। ঐতিহাসিককাল ধরে বালতিস্তান উপত্যকা, সিন্ধু নদ উপত্যকা, জাংস্কার, লাহুল ও স্পিটি, রুদোক ও গুজসহ আকসাই-চিন এবং নুব্রা উপত্যকা লাদাখের অংশ ছিল। বর্তমানে লাদাখ শুধু লেহ জেলা ও কারগিল জেলা নিয়ে গঠিত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017-2024 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com